মানিকগঞ্জে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা
সাভার কণ্ঠ
প্রকাশিত : ১২:৩৯ পিএম, ৭ মে ২০২৫ বুধবার

মানিকগঞ্জে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের বাঁচামারা বাজার থেকে আমতলী পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের ব্লক ব্যবহার, ইটের খোয়াসহ সড়কের দুই পাশের ফসলি জমি কেটে মাটি ভরাটের অভিযোগ রয়েছে। উন্নয়নের নামে এমন নিম্নমানের কাজের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের উদ্বেগ, এমন দুর্বল ব্লক দিয়ে তৈরি সড়ক কতদিন টিকবে? প্রকল্পের মেয়াদ মাত্র আড়াই মাস থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ২৫ শতাংশ! এরই মধ্যে তদারকির গাফিলতির অভিযোগে উপজেলা প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দৌলতপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাঁচামারা, চরকাটারি, বাঘুটিয়া ও জিয়নপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের জন্য গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আড়াই কিলোমিটার সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ‘জলবায়ু ও বন্যা সহনশীল অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় ৬ কোটি ৬০ লাখ ১৬ হাজার ১২৯ টাকার কাজটি পায় যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ২৫ শতাংশ!
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ম ভেঙে কাজ করছে। সড়কের মাটির জন্য ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মাটি নেওয়া হয়েছে সড়কের পাশের ফসলি জমি থেকে। রাস্তার স্লোপের জন্য যে ব্লক নির্মাণ করা হয়েছে তা খুবই ভঙ্গুর ও নিম্নমানের। হাতের সামান্য চাপেই ব্লকগুলো ভেঙে যাচ্ছে। এ ছাড়া সড়কে ফেলা হয়েছে নিম্নমানের খোয়া। এই সড়ক দিয়ে দুটি কলেজ, পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। কিন্তু ধীরগতি আর নিম্নমানের কাজে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
বাঁচামারা গ্রামের কৃষক ছিকিম মৃধা বলেন, ‘আমি আট শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করেছিলাম। কিছু দিনের মধ্যেই ফসল তুলতে পারতাম। কিন্তু রাস্তার কাজের জন্য ঠিকাদারের লোকজন আমার চার শতাংশ জমির মাটি কেটে নিয়ে যায়। তারা আমার কোনো কথা শোনেনি। বলেছিল ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ১ টাকাও পাইনি।’
আমতলী বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজার থেকে মালপত্র আনতে সমস্যা হচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে এখন চলাচলের উপায় নেই। কোনো পণ্য প্রয়োজন হলে উপজেলায় গিয়ে হেঁটে কিংবা অতিরিক্ত খরচ করে মালপত্র আনতে হয়। আমরা চাই সড়কের কাজ দ্রুত শেষ হোক।’
শাহিদুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক তরুণ অভিযোগ করেন, ‘এই সড়কের বাঁচামারা বাজারের কাছেই একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ঠিকাদার শুরু থেকেই অনিয়ম করেছেন। পাথরের সঙ্গে বিল্ডিং ভাঙা রাবিশ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তি অনুযায়ী ব্যবহার করার কথা ছিল ২০ মিলিমিটার রড, কিন্তু ব্যবহার করা হয়েছে ১৬ মিলিমিটার। কাজ শেষ হওয়ার আগে ১৬ মিলিমিটারের সঙ্গে দুই ফিট ২০ মিলিমিটার রড জোড়া দিয়ে সেটা দেখানো হয়েছে।’
চরকাটারি গ্রামের গৃহবধূ সালেহা বেগম বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে যাওয়া, স্কুলে যাওয়া- সবই হয়। কিন্তু রাস্তার অবস্থা এমন হয়েছে যে, হেঁটেও যাওয়া যায় না। আর কেউ অসুস্থ হলে তাকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ নেই।’
বাঁচামারা গ্রামের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলে, ‘স্কুলে যাওয়ার প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি পথ বালিতে আচ্ছাদিত। আগে যেমন অটোরিকশায় স্কুলে যেতে পারতাম, এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আর এখন তো বৃষ্টির দিন, আরও সমস্যা হবে।’
মো. আলী জিন্নাহ নামে এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে সড়কের স্লোপের ব্লক তৈরি করা হয়েছে। হাতের সামান্য চাপেই ব্লকগুলো ভেঙে পড়ছে। দুর্বল এই ব্লক দিয়ে তৈরি সড়ক কতদিন টিকবে তার হিসেব নেই। মূলত প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে নিতেই এগুলো করা হয়েছে।’
এলজিইডি মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এ বি এম খোরশেদ আলম বলেন, ‘সড়কটির বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। আমরা তদন্ত করছি। যেহেতু এটা উপজেলার কাজ তাই তা দেখভালের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্ব থাকে। দায়িত্ব অবহেলার জন্য উপজেলা প্রকৌশলী ইরাজ উদ্দিন দেওয়ানকে এরই মধ্যে বদলি করা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১ টাকাও বিল দেওয়া হয়নি। কাজের মানের বিষয়ে আমাদের নীতি জিরো টলারেন্স।’