Deprecated: str_replace(): Passing null to parameter #3 ($subject) of type array|string is deprecated in /home/sva4rjsx70/public_html/common/config.php on line 186
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারালেও মনোবল হারাননি আমজাদ

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারালেও মনোবল হারাননি আমজাদ

সাভার কণ্ঠ

প্রকাশিত : ০৯:৪০ এএম, ১২ মে ২০২৫ সোমবার

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারালেও মনোবল হারাননি আমজাদ

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারালেও মনোবল হারাননি আমজাদ

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম একটি শোকের দিন বললে ভুল হবে না। সাভারের রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারান প্রায় এগারো শ শ্রমিক, আহত হন আরও প্রায় আড়াই হাজার। ভবনটিতে কাজ করা কর্মী ও তাঁদের পরিবারের জীবনে নেমে আসে মানবিক বিপর্যয়।

এই ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন ভবনটিতে কাজ করা কুড়িগ্রামের আমজাদ হোসেনও। যদিও প্রাণে বেঁচে যান তিনি, কিন্তু চিরতরে হারিয়ে ফেলেন দুটি পা। পরিবারের কর্মক্ষম মানুষটি মুহূর্তের মধ্যেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন, সমাজ ও পরিবারের গ্লানিতে পরিণত হন। জীবন যেন থমকে যায়।

প্রথম এক বছর পঙ্গুত্ব আর হতাশার মধ্যেই কাটে আমজাদের। নিজের ভবিষ্যৎ, পরিবারের দায়িত্ব—সবকিছু নিয়ে ছিল দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তা। আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে প্রায় দেড় বছর লেগে গেছে। আগে সুস্থ ছিলাম, দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াতাম। যেখানে খুশি সেখানে ঠিকভাবে যাওয়া যেত। কিন্তু দুর্ঘটনার পর বাড়িতে আসার পর আর সেরকমটা করা হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম, শুয়ে শুয়ে ভাবতাম এখন কী করব। কী করলে জীবন চলবে। সংসার চলবে।’

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা সত্ত্বেও থেমে যাননি আমজাদ। প্রবল মনোবল আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, জীবনে নতুনভাবে পথচলার। আর এই যাত্রায় তাঁর পাশে দাঁড়ায় বেসরকারি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক। ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে তাঁর নতুন জীবনের শুরু।

আমজাদ হোসেন বলেন, ‘দোকান শুরু করার পর ভাবি, কোন জিনিসটি করলে দোকান সবচেয়ে ভালো চলবে। তারপর ভাবছিলাম রিচার্জের ব্যবসা কীভাবে করা যায়। নিজে নিজেই ভাবছিলাম কার কাছ থেকে এই সিমগুলো পাওয়া যাবে। কার মাধ্যমে এই সিমগুলো নিলে ব্যবসা করা যাবে...।’

স্মৃতি হাতড়ান আমজাদ, ‘বাংলালিংকের মনু নামের একজন ছিলেন, মারা গেছেন। উনি একদিন আমার দোকানে এসে বলেন, কী ব্যাপার, তোমার দোকানে কি রিচার্জের সিম নেই? আমি বলি, না ভাই, নেই। তখন তিনি বলেন, তাহলে তোমাকে বাংলালিংকের একটা সিম দিই? আমি রাজি হই। রিচার্জের সিম দেওয়ার কিছুদিন পরেই উনি পোস্ট কোড করে দেন। তখন টপ-আপ আমার কাছে ছিল না। বাংলালিংকের সঙ্গে প্রথম কাজ শুরু করি, আমি রিচার্জের কাজ করব বাংলালিংকের—যেন অন্য রকম একটি ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করতে থাকে।’

বর্তমানে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মোবাইল রিচার্জ বিক্রিকারী দোকানের মালিক আমজাদ। মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করেন এই দোকান থেকে। শুধু অর্থনৈতিক সাফল্যই নয়, সামাজিকভাবেও তিনি হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় একজন ব্যক্তি।

গ্রামের অনেকেই জানান, এলাকায় আগে তাঁরা এ ধরনের সেবা পাননি। আমজাদ হোসেনের কারণেই এই সেবা পাচ্ছেন। বাংলালিংকের সহায়তায় এবং আমজাদের ইচ্ছাশক্তির জোরেই আজ তিনি সফল। নিজের জীবন বদলে দিয়ে অন্যদেরও অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘যদি মনোবল শক্ত না থাকত তাহলে আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হতো না।’

আমজাদের মতে, বাংলালিংক কেবল একটি মোবাইল অপারেটরই নয়, বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি প্ল্যাটফর্ম। সমাজের পিছিয়ে পড়া অসংখ্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করে আসছে বাংলালিংক। আর প্রতিনিয়ত তৈরি করছে ‘দিনবদলের গল্প’।